একটা ভিডিও হয়তো কয়েকদিন ধরে অনেকেরই চোখে পড়েছে ফেসবুকের টাইমলাইনে,কেউ কেউ হয়তো টাইমলাইন স্ক্রল করা থামিয়ে খানিক সময়ের জন্যে দেখেও ফেলেছেন ছোট্ট এই ভিডিওটা। ভিডিওতে দেখা যায় দুই কাঁধে দুইটা ক্রাচ ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হোটেল গেটে ঢুকছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।কেউ কেউ হয়তো শেয়ার করেছেন,অন্যরা চলে গেছেন পরের নিউজে। আরেহ,মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই তো! সেই লোকটা,যে লোকটার ঘাড়েই দায়িত্ব পড়ে বারবার বিপর্যয়ে পড়া দলটাকে বাঁচাবেন,কখনো তীরে এসে তরী ডুবতে বসা দলটাকে পার করাবেন বৈতরণী!আরেহ এটাই তো শান্তশিষ্ট এই লোকটার দায়িত্ব। ওরে আবার ভাইরাল করার কি আছে! অথচ ভাবুন,এই ভিডিওটা পঞ্চপাণ্ডবের অন্য কারো।এতক্ষণে ভেসে যেতো সবার টাইমলাইন,দেশের প্রতি সেই ক্রিকেটারটার নিবেদন নিয়ে চোখের পাতা ভেজাতাম আমরা,কিবোর্ডে তুলতাম ঝড়!
মাহমুদুল্লাহ নামের একদম চুপচাপ লোকটা, সতীর্থরা যাকে রিয়াদ ভাই নামে ডাকে তাঁর কিন্তু কিচ্ছু যায় আসে বা এতে।তিনি তো বরাবরই অভ্যস্ত পর্দার আড়ালে নিজেকে দেখে।কিছু সমর্থক তাকে ভালোবেসে “দ্য সাইলেন্ট কিলার” নাম দিয়েছে, সেটা নিয়েও তাঁর খুব একটা মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয়না! তিনি বরং চুইংগাম চাবাতে চাবাতে অনুশীলন করেন আর ভাবেন পরবর্তী দিনে দলের পরিস্থিতি অনুযায়ী তাকে কি ধরনের ইনিংসটা খেলতে হতে পারে!
অথচ এই ভার নেয়ার গুরুদায়িত্ব নিয়ে তিনি দলে আসেন নি,এসেছিলেন এমন অলরাউন্ডার হিসেবে যিনি মিডল অর্ডারে মোটামুটি ব্যাট করতে পারেন আর হাত ঘুরিয়ে সময়ে অসময়ে এনে দিতে পারেন দারুণ ব্রেক থ্রু!
ক্যারিয়ারের শুরুতে বল হাতে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন অনেকবার।আর অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলে নখ কামড়ানো অনেক ম্যাচ বের করে এনেছেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে।অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে দারুণ একজন পছন্দ হতে পারেন,সেটা তিনি বারবার দেখিয়েছেন খুলনা টাইটানসকে ফাইনালে তুলে। তবে জাতীয় দলে তিনি না মুশফিক অধিনায়কের এই ইদুর দৌড়ে তিনি বরাবরই ছিলেন দ্বিতীয় পছন্দ। সেটা নিয়ে যদিও কখনো আক্ষেপ করতে দেখা যায় নি তাকে,বরং ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব যখনই পেয়েছেন, অবিচলতার সাথে পালন করে গেছেন।ক্লিনিক্যাল হিটে তিনি কতখানি নিখুঁত, সেদিন তিনি ঝড় তোলার পর অজিদের শুকনো মুখ দেখেই বোঝা গিয়েছিল!
এমন একটা জায়গায় সারাজীবন খেলে এসেছেন,যেখানে স্টারডম দেখানোর সুযোগ নেই খুব বেশি, সুযোগ নেই ইনিংসটাকে ইচ্ছেমতো লম্বা করারও।তবু নিতান্ত মাঝারি একটা দল থেকে সব ক্রিকেট পরাশক্তির কাছে সমীহ আদায় করে নেয়ার দারুণ এ যাত্রায় তার ক্যামিওগুলোর অনবদ্য ভূমিকা বুঝি কেউই অস্বীকার করার সাহস দেখাবে না!
এই বিশ্বকাপে সাকিবের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের আগ পর্যন্ত বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখটির নাম মাহমুদুল্লাই।তিনটি ওয়ানডে সেঞ্চুরির দুটো তো সেই ওয়ার্ল্ড কাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি হিসেবে ঢুকে গেছে ইতিহাসের পাতায়,আরেকটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়,সেটা বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে তোলা,নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়া সেই ইনিংস, যখন ৩৩ রানে চার উইকেট হারিয়ে দল ধুঁকছিলো রীতিমতো।
মাহমুদুল্লাহ হয়তো ক্যারিয়ারে প্রথম এবং শেষবারের মতো পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছিলেন সেইবারই।নিয়তির অদ্ভুত পরিহাসে আমরা তো তাকে বরাবরই ই রেখেছি আমাদের স্মৃতির সবচেয়ে অন্ধকার অংশটায়,খুব বেশি প্রয়োজন না হলে যে অংশ মনে রাখার কেউই দরকার মনে করে না!
লেখা – Abdullah Sadman
ছবি – Mahmudullah Riyad (অফিসিয়াল ফেসবুক ফ্যান পেজ)
#MahmudullahRiyad #Day32 #100DaysOfPositivity #SpreadPositivity#PositiveBangladesh